top of page
Writer's pictureSayan Ray

জয়ন্তী ভ্রমণ : ছোট্ট ছুটিতে ডুয়ার্সের রাণী জয়ন্তীতে রাত্রিবাস।

রাজারহাট টেকনোপলিস অফিসের বাইরে চা এ চুমুক দিতেই দিতেই ফোনটা বেজে উঠলো। সুমীরণ এর ফোন- জয়ন্তীতে রাত্রিবাসের নিমন্ত্রণ। সুমীরণ উত্তরবঙ্গের জয়ন্তীতে একটা হোমস্টে লিজ নিয়েছে। ওর website এর কাজ আমি করে দিয়েছিলাম। কলকাতার ভ্যাপসা গরম আর উত্তরবঙ্গে বর্ষার আগমন প্রায়। শুক্রবারের সন্ধ্যার উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে রওনা দিলাম। পরেরদিন শিলিগুড়ি ছুঁয়ে ট্রেন গুলমা ক্রস করে ডুয়ার্সে প্রবেশ করল। আমি রাজা ভাতখাওয়া স্টেশনে নেমে গেলাম। স্টেশনের অদ্ভুত নাম করনের হেতু গুগল করে জানলাম- স্থানীয় রাজা ভুটানের সৈন্যদের পরাস্ত করে এখানে বনভোজন করেছিলেন কাছেই ট্রেকারস হাট। বনবিভাগের বাংলো রয়েছে পাশেই। পায়ে দেখতে পারেন বাটারফ্লাই স্যাংচুয়ারী। আমার অটোরিক্সা প্রস্তুত। জঙ্গলের মধ্য দিয়েই আওয়াজ করে এগিয়ে চলল সে।

একসময় একটা ছোট জনবস্তি অতিক্রম করে জয়ন্তী নদীর পাড়ে এসে থামল ত্রিচক্রযানটি। সামনেই সুমীরণের Homestay. হোমস্টের ব্যালকনির রেলিংএ পা তুলে দিয়ে গরম চা এ চুমুক দিতে দিতে সুমীরণের ব্যবসার আপডেট নিচ্ছি। সবুজ পাহাড়ের পরে নীল আকাশে সাদা কালো সজল মেঘেরদল ভেসে বেড়াচ্ছে। ওই পাহাড়ের ওইপাড়ে ভুটান। পৃথিবীর অন্যতম সুখী দেশ। সুখ শব্দটা আপেক্ষিক। এই যেমন কলকাতার গরম থেকে জয়ন্তী নদীর সরু ঠান্ডা জলের স্রোতের মধ্যে পা ডুবিয়ে বসে থাকার স্বর্গসুখ অনুভব করছি। আস্তে আস্তে দেব দিবাকর অস্তাচলে গেলেন। চারদিকে অপরূপ এক স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে পড়ল। আমিও রিভারবেড ধরে আনন্দ মুভির রাজেশ খান্নার মত দিকশূন্য ভাবে হাটা লাগালাম। এখানে অনেকগুলি হোমস্টে হয়েছে। ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল। তাই আর বীরত্ব না দেখিয়ে সুমীরণের হোমস্টের পকোড়া খাওয়াই শ্রেয় মনে করলাম। রাতে বন মুরগীর ঝোল আর গরম ভাত সাথে গোল গোল বেগুনভাজা ঘী সহযোগে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকের সাথে আরো কতশত পোকামাকড়ের কনসার্ট শুনতে শুনতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরেরদিন সকালে সুমীরণের ছোট Wagoner জয়ন্তী নদীর নুড়ি-পাথরের মধ্যে দিয়ে দুলতে দুলতে নিয়ে চলল ছোটো মহাকাল মন্দিরের উদ্দেশে। জঙ্গলের মধ্যে অনেকটা পথ পা এ হেটেই পৌছাতে হয় মহাকাল অর্থাৎ শিবঠাকুরের দর্শনে।

এরপর আমাদের আজকের গন্তব্য বক্সাফোর্ট।

গুগল বলছে ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দে ভূটিয়াদের হটিয়ে বক্সাদুর্গের দখল নেয় ব্রিটিশরা। আন্দামানের সেলুলার জেলের মতন এখানেও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আটক রাখত ইংরেজরা।

গহীন অরণ্যের মধ্যে এই কয়েদখানা কত যে অত্যাচার আর কান্নার ইতিহাস বহন করে চলেছে ভাবলেই শিহরণ লাগে।

আজ বিকালে ফেরার ট্রেন । তাই সময় নষ্ট না করে ফিরে চললাম সুমীরণের হোমস্টেতে। দুপুরের একটু বিশ্রাম নিয়েই পিঠের ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। বিকালের ক্লান্ত আলো আমার মনকে আরো বিমর্ষ করে তুলল। ট্রেনের জানালার দিয়ে প্লাটফর্মে দাড়িয়ে থাকা সুমীরণের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে বিদায় জানালাম। গার্ড সাহেবের হুইসল বেজে উঠল- কালকে আবার রাজারহাট- কালকে আবার টেকনোপলিস।




27 views0 comments

Comments


bottom of page